কবি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
বিখ্যাত কবি 'গুইলউম অ্যাপোলিনেয়ারের' হাতের লেখায় রচিত মনুষ্য আকৃতির কবিতা (১৯১৮)

কবি সেই ব্যক্তি বা সাহিত্যিক, যিনি কবিত্ব শক্তির অধিকারী এবং কবিতা রচনা করেন। একজন কবি তাঁর রচিত ও সৃষ্ট মৌলিক কবিতাকে লিখিত বা অলিখিত উভয়ভাবেই প্রকাশ করতে পারেন। একটি নির্দিষ্ট প্রেক্ষাপট, ঘটনাকে রূপকধর্মী ও নান্দনিকতা সহযোগে কবিতা রচিত হয়। কবিতায় সাধারণত বহুবিধ অর্থ বা ভাবপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধারায় বিভাজন ঘটানো হয়। কার্যত যিনি কবিতা লিখেন, তিনিই কবি। তবে বাংলা ভাষার প্রধানতম আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, “সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি”।অর্থাৎ কবিতা লিখলেই বা কবি অভিধা প্রাপ্ত হলেই কেউ “কবি” হয়ে যান না। একজন প্রকৃত কবির লক্ষণ কী তা তিনি তাঁর কবিতার কথা নামীয় প্রবন্থ গ্রন্থের বিভিন্ন প্রবন্ধের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

কবিদের উৎপত্তি রহস্য অজ্ঞাত ও অজানাই রয়ে গেছে। সেই অনাদিকাল থেকে আধুনিক কাল পর্যন্ত যুগ-যুগ ধরে তাঁরা তাদের নিজস্ব চিন্তা-ভাবনাগুলোকে মনের মাধুরী মিশিয়ে সৃষ্টি করে চলেছেন নিত্য-নতুন কবিতা। কবিতাগুলো একত্রিত করে তাঁরা কবিতাসমগ্র বা কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। কখনো কখনো কাব্যগ্রন্থটি বিরাট আকার ধারণ করে সৃষ্টি করেন মহাকাব্য। প্রায় সকল ভাষায়ই কবিতা রচিত হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি ও ভিন্ন ভিন্ন সময়কে উপজীব্য করে রচিত হওয়ায় এগুলোর আবেদন, উপযোগিতা এবং ভাবও সাধারণতঃ ঐ সময়ের জন্য উপযোগী। তবে কতকগুলো কবিতা কালকে জয়ী করেছে বা কালজয়ী ভূমিকা পালন করেছে।[১] প্রত্যেক সমাজ-সভ্যতা ও নির্দিষ্ট ভাষায় রচিত হওয়ায় কবিরা বহুমাত্রিক, বিচিত্র ভঙ্গিমা, সৃষ্টিশৈলী প্রয়োগ করেছেন তাদের কবিতায় যা কালের বিবর্তনে যথেষ্ট পরিবর্তিত, পরিমার্জিত হয়ে বর্তমান রূপ ধারণ করেছে। পরবর্তীকালে এই প্রায়োগিক বিষয়াদিই ঠাঁই করে নিয়েছে বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসের পর্দায়। সাহিত্যের ইতিহাসে উৎপাদিত এই বৈচিত্র্যময় শিল্প শৈলীই বর্তমান সাহিত্যকে যথেষ্ট সমৃদ্ধ করেছে।

উৎপত্তি রহস্য[সম্পাদনা]

বাংলা সাহিত্য
Charyapada.jpg
Bankim Chandra Chattopadhyay.jpg Rabindranath Tagore in 1909.jpg Nazrul.jpg

Begum Rokeya.jpg Mir mosharraf hossain.jpg Sarat Chandra Chattopadhyay.jpg
Upendrokishor-ray.gif Jibanananda Das (1899–1954).jpg Swarnakumari Devi.jpg

Sunil Gangopadhyay 4190.JPG Humayun Ahmed 13Nov2010.jpg
বাংলা সাহিত্য
(বিষয়শ্রেণী তালিকা)
বাংলা ভাষা
সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
বাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা
কালানুক্রমিক তালিকা - বর্ণানুক্রমিক তালিকা
বাঙালি সাহিত্যিক
লেখক - ঔপন্যাসিক - কবি
সাহিত্যধারা
প্রাচীন ও মধ্যযুগীয়
চর্যাপদ - মঙ্গলকাব্য - বৈষ্ণব পদাবলিসাহিত্য - নাথসাহিত্য - অনুবাদ সাহিত্য -ইসলামি সাহিত্য - শাক্তপদাবলি - বাউল গান
আধুনিক সাহিত্য
উপন্যাস - কবিতা - নাটক - ছোটোগল্প - প্রবন্ধ - শিশুসাহিত্য - কল্পবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠান ও পুরস্কার
ভাষা শিক্ষায়ন
সাহিত্য পুরস্কার
সম্পর্কিত প্রবেশদ্বার
সাহিত্য প্রবেশদ্বার
বঙ্গ প্রবেশদ্বার

কবি শব্দটি 'কু' ক্রিয়ামূলের বংশে প্রসূত একটি শব্দ। 'কু' অর্থ' অ-সাধারণ (নবরূপে উত্তীর্ণ) কারী। [২] এতেই বোঝা যায় কবি সেই মানুষ যিনি সাধারণ অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি অথবা প্রচলিত শব্দকে নতুন রূপে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম। ইংরেজী শব্দ 'পয়েট' (poet), ল্যাটিন ভাষার প্রথম শব্দরূপ বিশেষ্যবাচক পুংলিঙ্গ 'পয়েটা, পয়েটে' ('poeta, poetae') (আক্ষরিক অর্থ 'কবি, কবি এর') থেকে সংকলিত হয়েছে। ফরাসি কবি আর্থার রিমবোঁদ "কবি" শব্দের লিখিতভাবে সারাংশ প্রদান করেছেন,

অবশ্য, এটি পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অনেক কবিকূলের মধ্যে একজন কবি যিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী প্রকাশ করেছেন মাত্র।[৩]

বুদ্ধদেব বসু তাঁর সম্পাদিত কবিতা পত্রিকার একটি প্রবন্ধ সংখ্যার (১৩৪৫, বৈশাখ) পরিকল্পনা করেছিলেন মূলত: কবিদের গদ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে। এরই সূত্রে জীবনানন্দ তাঁর প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি লিখেছিলেন যার নাম ‘কবিতার কথা’। এ প্রবন্ধের শুরুতেই আছে "কবি" সম্পর্কে স্বীয় ধ্যান-ধারণার সারকথাঃ

সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি ; কবি  কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার সারবত্তা রয়েছে, এবং তাদের পশ্চাতে অনেক বিগত শতাব্দী ধরে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্যবিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না ; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয় ; নানারকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করবার অবসর পায়।

উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ একবার কবিদের কাজ সম্বন্ধে বিবৃত করেছিলেন যে,

ম্যারিয়েন মুরে কর্তৃক কবিদের কাজ সম্পর্কে বলেছেন যে,

অন্যান্য অনেক কবি যেমনঃ 'এইনিডে' ভার্জিল এবং 'প্যারাডাইজ লস্টে' জন মিল্টন বর্ণনা করেছেন যে, 'গ্রীক পুরাণে বর্ণিত কাব্য ও সঙ্গীতাদির দেবীরা তাদের আবেগিক কর্মকাণ্ড প্রয়োগের মাধ্যমে কবিদের কাজে সহায়তা করেন'।

সংজ্ঞা নির্ধারণ[সম্পাদনা]

কবির বেদনা-বিদ্ধ হৃদয়ই কবিতার জন্ম-ভূমি। অর্থাৎ, সময়-বিশেষে কোন একটি বিশেষ সূত্রকে অবলম্বন করে কবির আনন্দ-বেদনা যখন প্রকাশের পথ পায়, তখনই কবিতার জন্ম। কবি বেদনাকে আস্বাদ্যমান রস-মূর্তি দান করেন। ব্যক্তিগত বেদনার বিষপুষ্প থেকে কবি যখন কল্পনার সাহায্যে আনন্দমধু আস্বাদন করতে পারেন, তখন বেদনা পর্যন্ত রূপান্তরিত ও সুন্দর হয়ে উঠে। বেদনার যিনি ভোক্তা, তাঁকে এটি দ্রষ্টা না হতে পারলে তাঁর দ্বারা কাব্য-সৃষ্টি সম্ভব নয়। কবির বেদনা-অনুভূতির এ রূপান্তর-ক্রিয়া সম্বন্ধে ক্রোচে তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে -

বাইরের জগতের রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শ-শব্দ বা আপন মনের ভাবনা-বেদনা কল্পনাকে যে-লেখক অনুভূতি-স্নিগ্ধ ছন্দোবদ্ধ তনু-শ্রী দান করতে পারেন, তাকেই আমরা কবি নামে বিশেষিত করি।

অনেকে বলেন যে, যিনি জগতের একখানি যথাযথ স্বাভাবিক চিত্রপট এঁকে দিতে পারেন, তিনিই যথার্থ কবি। অর্থাৎ, কবি জগতের ভালো-মন্দের যথাযথ চিত্র অঙ্কন করবেন। [৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Orban, Clara Elizabeth (১৯৯৭)। The Culture of Fragments: Word and Images in Futurism and Surrealism। Rodopi। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 90-420-0111-9 
  2. কলিম খান এবং রবি চক্রবর্তী রচিত বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ, ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা-১৮৫, প্রকাশক ভাষাবিন্যাস, কলকাতা। আশ্বিন ১৪১৬।
  3. Rimbaud, Arthur (১৯৫৭)। Louise Varèse, সম্পাদক। Illuminations, and Other Prose Poems। New Directions Publishing। পৃষ্ঠা xxx। আইএসবিএন 0-8112-0814-8 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: checksum (সাহায্য) 
  4. "সাহিত্য-সন্দর্শন", শ্রীশচন্দ্র দাশ, বর্ণ বিচিত্রা, ঢাকা, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৯৯৫, পৃষ্ঠাঃ৩০-৩১